Wednesday, 22 January, 2025
Logo

দাগনভূঞা (ফেনী) ইউএনওর কাঁধে দায়িত্বের পাহাড়, সেবা প্রধানে বিলম্ব

শাখাওয়াত হোসেন টিপুঃ

প্রকাশিত: / বার পড়া হয়েছে


ফাইল ফটো

▷ উপজেলা পরিষদ ও পৌর প্রশাসকের  দায়িত্ব।  সকাল-সন্ধা সময় দিয়েও পূরিপূর্ণ পরিষেবা প্রদান সম্ভব হচ্ছেনা। 

▷ সরকারের অর্পিত অতিরিক্ত দায়িত্ব আমি ইনজয় করছি। চেষ্টা করছি দিনের কাজ দিনেই সমাধান করতে।-স ম আজহারুল ইসলাম ইউএনও দাগনভূঞা, ফেনী।

সরকারের পালাবদলের পর অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আত্মগোপনে রয়েছে। যার কারণে অনেকটা বাধ্য হয়ে প্রশাসনের কর্মকর্তারা জনপ্রতিনিধির অনেক কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এতে বিঘ্ন হচ্ছে পরিষেবা কার্যক্রম। প্রতিদিনই এমন শত শত অভিযোগ আসছে নিয়মিত সেবা না পাওয়ার বিষয়ে। ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার বর্তমান অবস্থা এটি। 

তবে কিভাবে পরিচালনা করছেন তা জানতে সরেজমিন থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলেই মিলে তথ্য। ৫ আগষ্ট সরকারের পালাবদলের পর বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ট্যাগ অফিসাররা কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু তা সঠিক সময়ে সম্পাদন না হওয়ায় এবং অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আত্মগোপনে থাকায় পদ গুলো শূণ্য ঘোষনা করে নির্দিষ্ট কমিটি, উপজেলা শিশু শ্রম পরিবেক্ষণ কমিটি, বাল্য বিবাহ নিরোধ কমিটি, উপজেলা পুষ্টি সমন্বয় কমিটি, কৃষি পূর্ণবাসন কমিটি, ভিজিডি- বিজিএফ উপজেলা কমিটি, খাসজমি বন্দোবস্ত কমিটি, আশ্রায়ন আবাসন সংক্রান্ত কমিটির সভাপতি ও অন্যান্য দায়িত্বে থাকায় এসব বিষয় নিয়ে জুরুরি ও সমসাময়িক কাজের অংশ হিসেবে সময় দিতে হচ্ছে। পাশাপাশি উপজেলার মৎস, পরিসংখ্যান, বিআরডিবি, স্বাস্থ্য, যুব উন্নয়ন, মহিলা বিষয়ক, কৃষি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল, বন বিভাগ, প্রাণী সম্পদ, ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের নিয়মিত ও জুরুরী কাজ ে সময় দিতে হচ্ছে। এছাড়াও অভিযান, বাজার মনিটরিং, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, মোবাইল কোট, বন্যায় ক্ষতি গ্রস্থদের পূর্ণবাসন, নদী ভাঙ্গন, ৫ আগস্টে হামলায় আহত-নিহতের বিভিন্ন কাজ সহ বিভিন্ন কাজ করতে হচ্ছে।

২৪ সেপ্টম্বর থেকে ইউএনও পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। গত দেড় মাসে তিনি ৩দিন অফিস করতে পেরেছেন। পৌরসভা নিয়মিত কাজের সপ্তাহে একদিন বৃহস্পতিবার আসার কথা থাকলে বিশেষ কাজে আসা সম্ভব হয়না। উপজেলার ৮ টি ইউনিয়ন ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ/মহিলার দায়িত্ব পালন বরছেন ইউএনও। তিনি এসব পরিষদের কাজের জন্য সোমবার ও বুধবার নির্ধারণ করছেন। তবে জুরুরি কাজের প্রয়োজন হলে সেসব স্থানেও যাচ্ছেন। উপজেলার কয়েকটি দপ্তরের স্থায়ী কমিটিতে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ শূন্য ও মহিলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করতো সেগুলোর কাজ বর্তমানে ইউএনওকে সামলাতে হচ্ছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা সংক্রান্ত কমিটি, শিক্ষা সপ্তাহ কমিটি সহ জাতীয় দিবস গুলোর সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন ইউএনও। পাশাপাশি উপজেলা ২৪ উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯টি মাদ্রাসা, ১ টি কলেজের মধ্যে কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়া হয়। সেটাও তাদের জন্য বাড়তি চাপ হয়ে যায়। কেননা তারা প্রথমে নিজেদের দপ্তরে সময় দেয়ার পাশাপাশি অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরে সময় দিতে হচ্ছে।

যার কারণে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অফিস করার কথা থাকলেও প্রতিদিনই সন্ধা এমনকি অনেক সময় গভীর রাত পর্যন্ত অফিস বরতে হচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না ছুটির দিনও। ১ নভেম্বর শুক্রবার বেলা ১২টা দিকে অফিস করতে দেখা যায় ইউএনওকে। কিছু কাগজপত্রে স্বাক্ষর করা শেষে যোগ দেয় উপজেলা যুব উন্নয়ন অফিসের আয়োজনে একটি অনুষ্ঠানে। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত বিভিন্ন দাপ্তরিক কাজ শেষ করে বাসায় যান ইউএনও। তারপর সাপ্তাহিক একদিন সময় দেয়ার জন্য বিকাল ৫টায় পৌরসভা কার্যালয়ে যান তিনি। সেখানে সাড়ে ৩ঘন্টা বিভিন্ন কার্যক্রম শেষে রাত সাড়ে আটটায় অফিস থেকে বের হয়ে বাসায় দিকে রওয়ানা করতে দেখা যায়। নিয়মিত কাজের পাশাপাশি প্রতিদিন অতিরিক্ত কয়েকটি দিবস ও দাপ্তরিক কমিটির কাজে সময় দিতে হচ্ছে ইউএনওকে। বিশেষ করে জেলা ও উপজেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভা, জেলা ও উপজেলার সমন্বয় সভা, জেলার রাজস্ব সভা, শিক্ষা সপ্তাহ, বিজ্ঞান মেলা, বিশ্ব শিক্ষক দিবস, সৃজনশীল মেধা, শীতকালীন গেলা, গ্রীষ্মকালীন খেলা, মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের দূর্নীতি প্রতিরোধ বিষয়ক প্রতিযোগিতা, সামাজিক সম্প্রীতি কমিটি, মাদক বিরোধী কমিটি, আইসিটি বিষয়ক কমিটি, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়ন কমিটি, সড়ক নিরাপত্তা কমিটি, উপজেলা লিগ্যাল এড কমিটি, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ টাস্কফোর্স কমিটি, উপজেলা মৌলিক স্বাক্ষরতা। 

উপজেলার  সব শিক্ষা  প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ইউএনও এর স্বাক্ষরেই হচ্ছে। এদিকে ১০১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষা কমিটি, শিশু প্রতিযোগিতা, শিক্ষা পদক প্রতিযোগিতা, সমন্বয় সভা বিভিন্ন কার্যক্রম এডহক কমিটির মাধ্যমে ইউএনওকে সামলাতে হচ্ছে।

মাতুভূঞা ইউনিয়নের  বাসিন্দা আব্দুল রব  বলেন, গত এক সপ্তাহ পর্যন্ত ঘুরতেছি। একটা স্বাক্ষরের জন্য কিন্তু তা নেয়া সম্ভব হচ্ছেনা। ইউএনও স্যারের কি দোষ দেবো উনিতো আর মেশিন না। অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনে এদিক সেদিক দৌড়াতে হচ্ছে উনাকে।পরিষদের অফিস সহায়ক বলেন, ইউএনও স্যার দুই সপ্তাহে একদিন এসেছেন। তবে জুরুরী কোনো প্রয়োজন হলে আমরা যোগাযোগ করে স্যারের কাছে যাই। এবং তিনি তখন সময় দেন। 

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা মোঃ শফিউল আজম  বলেন, নিয়মিত কাজের সাথে প্রায় সকল দপ্তরের কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। যার কারণে প্রতিদিন অতিরিক্ত সময় দিতে হচ্ছে। তারপরও সবকাজ সময় মত সম্পাদন করা সম্ভব হচ্ছেনা। ইউএনও স্যার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করছে। অনেক গুলো কাজ বাসায় গিয়ে করছে। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স ম আজহারুল ইসলাম  বলেন, আমি সরকারী একজন বর্মকর্তা হিসেবে সরকারে যেকোনো অর্পিত দায়িত (অতিরিক্ত) পালন করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি। অতিরিক্ত দায়িত্ব পেতে হলে অবশ্যই যোগ্যতা ও বিশ্বস্ততার প্রয়োজন। তাই আমি মনে করি আমাকে সেভাবেই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এবং আমি এই কাজ করতে এনজয় করি। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছি। কিছু কাজ বাকী থাকলে বাসায় নিয়ে যাই। সেখানে কাজ গুলো শেষ করে তবেই ঘুমাই। তারপরও মাঝে মাঝে সময়মত কাজ করা সম্ভব হয় না।  যার কারণ হঠাৎ কিছু  প্রোগ্রাম চলে আসি। দিনের কাজ দিনেই শেষ করতে চাই বিধায় কাজ বাকী থাকছেনা।

Share

আরো খবর


সর্বাধিক পঠিত